রাজধানীর দুই খালে দুই শিশু নিখোঁজ

রাজধানীর দুই খালে দুই শিশু নিখোঁজ
প্রথম পাতা
যুগান্তর রিপোর্টরাজধানীর কদমতলী ও সবুজবাগে দুটি খালের পানিতে ডুবে দুই শিশু নিখোঁজ হয়েছে। এদের একজনের নাম আশামণি (৫)।
অপরজন আরশাদুল, তার বয়স সাড়ে চার বছর। এদের মধ্যে শনিবার বিকালে আশামণি ও রোববার বিকালে আরশাদুল পানিতে পড়ে যায়। ঘটনার পর থেকে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন তাদের সন্ধান চালালেও রোববার রাত ১টা পর্যন্ত তাদের খোঁজ মেলেনি। ফায়ার সার্ভিস সূত্র বলছে, শিশু দুটিকে উদ্ধারে তাদের তৎপরতা অব্যাহত আছে।
শনিবার বিকাল ৪টার দিকে মেরাজনগর ডি-ব্লকের বাসার পাশে রায়েরবাগ-কদমতলী সড়কে ডিএনডি খালের ওপর কালভার্ট ব্রিজে আরেক শিশুর সঙ্গে বল খেলছিল শিশু আশামণি ওরফে তোহামণি। হঠাৎ খালের পানিতে জমে থাকা ময়লার ভারি স্তূপের ওপর গিয়ে বলটি পড়ে।
আশামণি বলটি কুড়াতে ময়লার স্তূপের ওপর পা রাখামাত্র স্তূপ দেবে গিয়ে পানিতে ডুবে যায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শিশুটি বাঁচার জন্য পানির ওপরে হাত নাড়াচ্ছিল। মুহূর্তের মধ্যে পানির স্রোতে সে অন্যত্র চলে যায়। অন্য শিশুদের ডাক-চিৎকারে শিশুটির বাবা-মা ও প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তারা অনেক চেষ্টা চালিয়েও শিশুটির হদিস পাননি। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলও ঘটনাস্থলে যায়। তারা উদ্ধার তৎপরতা চালায়। খোঁজ না পেয়ে তারাও চলে যান। রোববার আবার তারা উদ্ধার তৎপরতা চালান। কিন্তু রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিশুটিকে উদ্ধার করা যায়নি।
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের উিউটি অফিসার লিমা খানম যুগান্তরকে বলেন, উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে কাজ করছেন। শিশুটিকে এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, খালে ময়লা-আবর্জনা থাকায় উদ্ধার কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। এছাড়া উৎসুক জনতার ভিড়ের কারণেও উদ্ধার তৎপরতা চালাতে বিড়ম্বনায় পড়েন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। রাত ৮টার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। তবে সনাতন পদ্ধতিতে কয়েকজন খালের পানিতে শিশুটিকে উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রাখেন।
ফায়ার সার্ভিস সদর দফতর স্টেশন অফিসার হাবিবুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, খবর পেয়ে শনিবার বিকালে উদ্ধার কাজ শুরু করি। খালে প্রচুর ময়লা থাকায় শিশুটিকে উদ্ধার করা যায়নি। সিটি কর্পোরেশনে ভেকুর জন্য আবেদন জানানো হয়। নির্বাচনের জন্য লোকবল না থাকায় এবং ভেকু দিতে না পারায় উদ্ধার কাজ বন্ধ রেখে চলে যাই। রোববার সকালে পুনরায় শিশুটি উদ্ধারের জন্য ঘটনাস্থলে যাই। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে ভেকু আনতে শিশুর চাচা বিল্লালকে বলি।
শিশুটির চাচা বিল্লাল হোসেন বলেন, ফায়ার সার্ভিস সদর দফতর স্টেশন অফিসার আমাকে বলেছেন-খালের ময়লা পরিষ্কার না করা হলে শিশুটিকে উদ্ধার করা যাবে না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে ভেকু আনতে বলেন তিনি। এরপর ট্রিপল নাইনে (৯৯৯) ফোন করে সিটি কর্পোরেশনকে ভেকুর কথা বললে তারা জানায়, পে-অর্ডার করার পর দেয়া হবে। ভেকু না আসায় উদ্ধার কাজে ব্যাঘাত ঘটছে।
এদিকে শিশুটির বাবা-মা ও স্বজনদের আহাজারিতে এলাকায় শোকের মাতম চলছে। তারা বিলাপ করছেন আর বলছেন- ‘হে আল্লাহ আমার মা-মণির লাশটিও কি শেষ পর্যন্ত দেখতে পারব না। আমার মা-মণি আর স্কুলে যাবে না। কোথায় গেলে পাব মা-মণিকে।’ শিশুটির বাবার নাম এরশাদ। তিনি মোদি ব্যবসায়ী। গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরশেলই গ্রামে। শিশু আশামণিকে মেরাজনগর ফারহা মডেল স্কুলে শিশুশ্রেণিতে ভর্তি করেছিলেন বাবা এরশাদ।
পূর্ব রাজারবাগে শিশু নিখোঁজ : এদিকে রোববার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সবুজবাগ থানার পূর্ব রাজারবাগের হক প্রজেক্ট এলাকার পাশের মাণ্ডা খালে শিশু আরশাদুলের ব্যাডমিন্টন খেলার সামগ্রী পড়ে যায়। সেটি তুলতে গিয়ে পানিতে ডুবে যায় সে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে যায়।
তারা শিশুটিকে উদ্ধার তৎপরতা চালায়। স্থানীয় সূত্র জানায়, মাণ্ডা খালের পাশেই শিশু আরশাদুলের বসতঘর। বিকালে আরশাদুল ও তার বড় ভাই এবং আরেক শিশু খালের পাশে খেলছিল। তার বড় ভাইয়ের বয়স ৭ বছর। ব্যাডমিন্টন খেলার সামগ্রী খালের পানি থেকে তুলতে গিয়ে আরশাদুল পড়ে গেলে তার বড় ভাই ও অপর শিশু বাসায় গিয়ে বাবা-মাকে ঘটনা জানায়।
এরপর পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয় লোকজন ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। ফায়ার সার্ভিস তৎক্ষণাৎ এসে সেখানে উদ্ধার তৎপরতা চালায়। রাত সাড়ে ১০টায় উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর নজরুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, আজ সকাল ৯টা থেকে আবারও উদ্ধার অভিযান চালানো হবে। তিনি বলেন, খালে ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত পানি আছে। ৩ থেকে ৪ ফুট ময়লা আছে। বাচ্চাটি ময়লায় তলিয়ে যেতে পারে। প্রায় ২০০ মিটার পর্যন্ত আমাদের ডুবুরি দল গেছে খোঁজার জন্য কিন্তু শিশুটিকে পাওয়া যায়নি।
from JUGANTOR https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/274216/রাজধানীর-দুই-খালে-দুই-শিশু-নিখোঁজ
https://ift.tt/31jPlW2

রাজধানীর দুই খালে দুই শিশু নিখোঁজ
প্রথম পাতা
যুগান্তর রিপোর্টরাজধানীর কদমতলী ও সবুজবাগে দুটি খালের পানিতে ডুবে দুই শিশু নিখোঁজ হয়েছে। এদের একজনের নাম আশামণি (৫)।
অপরজন আরশাদুল, তার বয়স সাড়ে চার বছর। এদের মধ্যে শনিবার বিকালে আশামণি ও রোববার বিকালে আরশাদুল পানিতে পড়ে যায়। ঘটনার পর থেকে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন তাদের সন্ধান চালালেও রোববার রাত ১টা পর্যন্ত তাদের খোঁজ মেলেনি। ফায়ার সার্ভিস সূত্র বলছে, শিশু দুটিকে উদ্ধারে তাদের তৎপরতা অব্যাহত আছে।
শনিবার বিকাল ৪টার দিকে মেরাজনগর ডি-ব্লকের বাসার পাশে রায়েরবাগ-কদমতলী সড়কে ডিএনডি খালের ওপর কালভার্ট ব্রিজে আরেক শিশুর সঙ্গে বল খেলছিল শিশু আশামণি ওরফে তোহামণি। হঠাৎ খালের পানিতে জমে থাকা ময়লার ভারি স্তূপের ওপর গিয়ে বলটি পড়ে।
আশামণি বলটি কুড়াতে ময়লার স্তূপের ওপর পা রাখামাত্র স্তূপ দেবে গিয়ে পানিতে ডুবে যায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শিশুটি বাঁচার জন্য পানির ওপরে হাত নাড়াচ্ছিল। মুহূর্তের মধ্যে পানির স্রোতে সে অন্যত্র চলে যায়। অন্য শিশুদের ডাক-চিৎকারে শিশুটির বাবা-মা ও প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তারা অনেক চেষ্টা চালিয়েও শিশুটির হদিস পাননি। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলও ঘটনাস্থলে যায়। তারা উদ্ধার তৎপরতা চালায়। খোঁজ না পেয়ে তারাও চলে যান। রোববার আবার তারা উদ্ধার তৎপরতা চালান। কিন্তু রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিশুটিকে উদ্ধার করা যায়নি।
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের উিউটি অফিসার লিমা খানম যুগান্তরকে বলেন, উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে কাজ করছেন। শিশুটিকে এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, খালে ময়লা-আবর্জনা থাকায় উদ্ধার কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। এছাড়া উৎসুক জনতার ভিড়ের কারণেও উদ্ধার তৎপরতা চালাতে বিড়ম্বনায় পড়েন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। রাত ৮টার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। তবে সনাতন পদ্ধতিতে কয়েকজন খালের পানিতে শিশুটিকে উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রাখেন।
ফায়ার সার্ভিস সদর দফতর স্টেশন অফিসার হাবিবুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, খবর পেয়ে শনিবার বিকালে উদ্ধার কাজ শুরু করি। খালে প্রচুর ময়লা থাকায় শিশুটিকে উদ্ধার করা যায়নি। সিটি কর্পোরেশনে ভেকুর জন্য আবেদন জানানো হয়। নির্বাচনের জন্য লোকবল না থাকায় এবং ভেকু দিতে না পারায় উদ্ধার কাজ বন্ধ রেখে চলে যাই। রোববার সকালে পুনরায় শিশুটি উদ্ধারের জন্য ঘটনাস্থলে যাই। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে ভেকু আনতে শিশুর চাচা বিল্লালকে বলি।
শিশুটির চাচা বিল্লাল হোসেন বলেন, ফায়ার সার্ভিস সদর দফতর স্টেশন অফিসার আমাকে বলেছেন-খালের ময়লা পরিষ্কার না করা হলে শিশুটিকে উদ্ধার করা যাবে না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে ভেকু আনতে বলেন তিনি। এরপর ট্রিপল নাইনে (৯৯৯) ফোন করে সিটি কর্পোরেশনকে ভেকুর কথা বললে তারা জানায়, পে-অর্ডার করার পর দেয়া হবে। ভেকু না আসায় উদ্ধার কাজে ব্যাঘাত ঘটছে।
এদিকে শিশুটির বাবা-মা ও স্বজনদের আহাজারিতে এলাকায় শোকের মাতম চলছে। তারা বিলাপ করছেন আর বলছেন- ‘হে আল্লাহ আমার মা-মণির লাশটিও কি শেষ পর্যন্ত দেখতে পারব না। আমার মা-মণি আর স্কুলে যাবে না। কোথায় গেলে পাব মা-মণিকে।’ শিশুটির বাবার নাম এরশাদ। তিনি মোদি ব্যবসায়ী। গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরশেলই গ্রামে। শিশু আশামণিকে মেরাজনগর ফারহা মডেল স্কুলে শিশুশ্রেণিতে ভর্তি করেছিলেন বাবা এরশাদ।
পূর্ব রাজারবাগে শিশু নিখোঁজ : এদিকে রোববার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সবুজবাগ থানার পূর্ব রাজারবাগের হক প্রজেক্ট এলাকার পাশের মাণ্ডা খালে শিশু আরশাদুলের ব্যাডমিন্টন খেলার সামগ্রী পড়ে যায়। সেটি তুলতে গিয়ে পানিতে ডুবে যায় সে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে যায়।
তারা শিশুটিকে উদ্ধার তৎপরতা চালায়। স্থানীয় সূত্র জানায়, মাণ্ডা খালের পাশেই শিশু আরশাদুলের বসতঘর। বিকালে আরশাদুল ও তার বড় ভাই এবং আরেক শিশু খালের পাশে খেলছিল। তার বড় ভাইয়ের বয়স ৭ বছর। ব্যাডমিন্টন খেলার সামগ্রী খালের পানি থেকে তুলতে গিয়ে আরশাদুল পড়ে গেলে তার বড় ভাই ও অপর শিশু বাসায় গিয়ে বাবা-মাকে ঘটনা জানায়।
এরপর পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয় লোকজন ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। ফায়ার সার্ভিস তৎক্ষণাৎ এসে সেখানে উদ্ধার তৎপরতা চালায়। রাত সাড়ে ১০টায় উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর নজরুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, আজ সকাল ৯টা থেকে আবারও উদ্ধার অভিযান চালানো হবে। তিনি বলেন, খালে ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত পানি আছে। ৩ থেকে ৪ ফুট ময়লা আছে। বাচ্চাটি ময়লায় তলিয়ে যেতে পারে। প্রায় ২০০ মিটার পর্যন্ত আমাদের ডুবুরি দল গেছে খোঁজার জন্য কিন্তু শিশুটিকে পাওয়া যায়নি।
No comments: