ঈদের আগেই সুখবর পাচ্ছেন নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল- ৭ মাস আগে সারাদেশে ২৭৩০টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নতুন করে এমপিওভুক্ত হলেও এখনো বেতন পাননি এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী। জুনের মধ্যে বাজেটে এমপিওর জন্য বরাদ্দ প্রায় ১২শ কোটি টাকা খরচ করতে না পারলে এ অর্থ অন্য খাতে চলে যাবে। এমন শঙ্কার মধ্যে ঈদের আগেই নতুন এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী বেতন-ভাতা ছাড় করতে তোড়জোড় শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরই অংশ হিসেবে ছুটির মধ্যেই রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের এমপিও সংশ্লিষ্টরা অফিস করেছেন। সব কিছু ঠিকটাক থাকলে চলতি সপ্তাহ এমপিও সরকারি অর্ডার (জিও) হতে পারে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদের আগেই নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা পেতে যাচ্ছেন। তালিকাভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের কাগজপত্র কয়েক দফায় যাচাই-বাছাই শেষে তালিকা চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর। এখন প্রতিষ্ঠানের কোড নাম্বার প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত কাজ শুরু করেছে। করোনাভাইরাসের কারণে ১ মাস সরকারি অফিস বন্ধ থাকলেও ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের কর্মকর্তারা এমপিও নিয়ে কাজ করেছেন। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ বলেন, এমপিও কার্যক্রম শেষের দিকে। শিক্ষকদের আর্থিক সংকটের বিষয়টি আমরা অনুধাবন করেই ছুটির মধ্যেও এ নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এমপিওর সব কার্যক্রম শেষ করতে পারবো। করোনার কারণে ছুটি না থাকলে এতদিনে শিক্ষকরা বেতন পেয়ে যেতেন। বিলম্ব হলেও তারা গত জুন থেকে বেতন-ভাতা পাবেন বলে জানান তিনি। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, চলতি অর্থবছরের মধ্যেই যেন শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা পান সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। ছুটির মধ্যেও নতুন এমপিওভুক্তি নিয়ে কাজ চলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোড সৃষ্টিসহ অনলাইনের যা কাজ আছে, সেগুলো করা হচ্ছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী জুনের আগে অর্থ ছাড় না করলে শিক্ষকরা আর্থিক সুবিধা পাবেন না। এমপিও খাতের অর্থ অন্য খাতে খরচ হতে পারে। এ কারণে গতকাল রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের কর্মকর্তারা এমপিও নিয়ে কাজ করেছেন। এ সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত গেজেট জারি করা হবে। এরপর প্রতিষ্ঠানের কোড সৃষ্টি এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ করতে মাউশিকে নির্দেশ দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, আমাদের গ্রাউন্ড ওয়ার্ক শেষ হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় জিও জারি করবে। এরপর আমরা এমপিওভুক্তির কার্যক্রম শেষ করবো। জানা গেছে, প্রায় সাড়ে ৯ বছর এমপিওভুক্তি বন্ধ থাকার পর গত বছরের ২৩ অক্টোবর নতুন দুই হাজার ৭৩০টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে আরও ৭টি প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ বিবেচনায় এমপিওভুক্ত করা হয়। তালিকাভুক্ত অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল-কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্যাদির সঠিকতা যাচাই করতে মাউশির ডিজির নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান বু্যরো (ব্যানবেইস) একজন প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের একজন প্রতিনিধি, মাউশির কলেজ ও মাধ্যমিক শাখার দুই পরিচালক, মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব। কমিটির সদস্য সচিব করা হয় মাউশির মাধ্যমিক শাখার উপ-পরিচালকে। কমিটির সদস্যরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরিসংক্রান্ত কাগজপত্র যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠায়। কাগজপত্র যাচাই করতে ৭ মাস পার করে দেন কর্মকর্তারা। গত জুন থেকে এমপিওর সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও সেসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্তির সুবিধা পাননি। ফলে নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী চরম দুর্দশায় জীবন যাপন করছেন। গত ২৩ অক্টোবর সরকার ঘোষিত দুই হাজার ৭৩০টি নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৩৯টি, ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণির মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১০৮টি, ৯ম-১০ম শ্রেণির মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৮৮৭টি, স্কুল অ্যান্ড কলেজ ৬৮টি, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ৯৩টি এবং ডিগ্রি কলেজ ৫৬টি। আর নতুন এমপিওভুক্ত মাদ্রাসার মধ্যে দাখিল মাদ্রাসা সংখ্যা ৩৫৮টি, আলিম মাদ্রাসার সংখ্যা ১২৮টি, ফাজিল মাদ্রাসা ৪২টি ও কামিল মাদ্রাসা ২৯টি। নতুন এমপিওভুক্ত কারিগরি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কৃষি ৬২টি, ভোকেশনাল স্বতন্ত্র ৪৮টি, ভোকেশনাল সংযুক্ত ১২৯টি, বিএম স্বতন্ত্র ১৭৫টি ও বিএম সংযুক্ত ১০৮টি। এমপিওভুক্তকরণে চারটি শর্ত দেওয়া হয়। এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো-২০১৮ অনুযায়ী শর্তগুলো পূরণ করতে হবে। এ শর্তের আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য যাচাই-বাছাই করে। যাচাই-বাছাই শেষ করে স্কুল ও কলেজের তালিকা চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। এবার এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কোড নম্বর দেবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তালিকাটি চূড়ান্ত করে মাউশিতে পাঠানো হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। মাউশির কর্মকর্তারা জানান, চূড়ান্ত তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোড নম্বর দেওয়া হবে। এই কোড নম্বর ছাড়া শিক্ষক ও কর্মচারীরা এমপিওর জন্য আবেদন করতে পারবেন না। কোড নম্বর পাওয়ার পর শিক্ষকরা এমপিওর আবেদন করবেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে। এরপর জেলা শিক্ষা অফিস ও মাউশির আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে যাচাই বাছাই শেষে মাউশি চূড়ান্ত এমপিওর ঘোষণা দিবে। সূত্র আরও জানায়, এরই মধ্যে স্কুল-কলেজের তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। ১ হাজার ৬৫০টি প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হলেও সেখান থেকে কিছু স্কুল, কলেজ বাদ পড়েছে। চার শর্তে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। শর্তে বলা হয়, যেসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বিবেচিত হয়েছে তার মধ্যে কোনো প্রতিষ্ঠান নীতিমালা অনুযায়ী কাম্য যোগ্যতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হলে, সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিও স্থগিত করা হবে। পরবর্তীতে কাম্য যোগ্যতা অর্জন করলে স্থগিত এমপিও অবমুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। শিক্ষক নিবন্ধন প্রথা চালু হওয়ার আগে বিধিসম্মতভাবে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্তির সুযোগ পাবেন। পরবর্তী সময়ে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য অবশ্যই নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হবে। সূত্র : পূর্বপশ্চিম এম এন / ২৭ এপ্রিল
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2VEWMpJ
via IFTTT
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2VEWMpJ
via IFTTT
No comments: